কক্সবাজার সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান

কক্সবাজার সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন

কক্সবাজার


নদী পাহাড় সমুদ্রবেষ্টিত  এক অনন্যবৈশিষ্ট্যমন্ডিত জেলা হল কক্সবাজার। বাংলাদেশের ছাত্রদের বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলের ছাত্রদের প্রায়ই একাডেমিক ও চাকরি ভাইভাতে  কক্সবাজার সম্পর্কিত প্রশ্নের  সম্মুখীন হতে হয়।  তাই, কক্সবাজার সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান ও ভাইভা  প্রশ্ন নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ


কক্সবাজার জেলার নামকরণ সংক্রান্ত প্রশ্ন

পূর্বে কক্সবাজার এলাকার একাধিক নাম ছিল বলে গবেষকরা ধারণা করেন।এসব নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য  ছিল পালংকি ,প্যানোয়া ও পালোয়ানছি।

পালংকি  নামকরণ কিভাবে হল?

কক্সবাজারের বার্মিজ নাম ফলংজি । বার্মিজ শব্দ ফলং অর্থ অফিসার বা সাহেব। আর জি অর্থ বাজার। এভাবে ফলংজি শব্দের অর্থ দাঁড়ায় সাহেব- বাজার। রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন এখনো ফলংজি শব্দটি ব্যবহার করে। পরবর্তীতে এই ফলংজি শব্দটি কালের বিবর্তনে পালংকিতে এসে দাড়িয়েছে।

প্যানোয়া নামকরণ কিভাবে হল?

কক্সবাজার জেলার অন্যতম উপজেলা রামুর প্রাচীন নাম পেঁওয়া প্রে। বার্মিজ শব্দ পেঁওয়া প্রে এর অর্থ হলুদ ফুলের রাজ্য। পেঁওয়া অর্থ হলুদ ফুল আর প্রে অর্থ হচ্ছে রাজ্য।কক্সবাজার, রামুসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় একপ্রকার কলাপাতা শাক জন্মায়। এইসব গাছে একধরণের হলুদ ফুল জন্মে।  বার্মিজ ভাষাভাষী রাখাইনরা এসব ফুল দেখে পুরো এলাকাকে পেঁওয়া প্রে নামে অভিহিত করে।পেঁওয়াকে স্থানীয় লোকজন বিকৃত করে প্যানোয়া বলে।


পালোয়ানছি নামকরণ কিভাবে হল?

কারো কারো মতে এই এলাকার নাম ছিল পালোয়ানছি। পালোয়ানছি বার্মিজ শব্দ যার অর্থ নদীর মোহনা। কক্সবাজারের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর আর উত্তরে রয়েছে বাঁকখালি নদী। বাঁকখালি নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় কক্সবাজারের অবস্থান। তাছাড়া অনেকের মতে পালোয়ানছি নামটি পর্তুগিজ। পর্তুগিজ-মগ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল বাঁকখালি নদীর মোহনায়। 

কক্সবাজার নামকরণ কিভাবে হল? 

১৭৮৪ সালে আভা রাজ্যের রাজা বোধপায়া আরাকান দখল করে নিলে আরাকান স্বাধীনতা হারিয়ে আভা রাজ্যের আওতাধীন হয়।আরাকান দখলে নিয়ে আভা'র সেনাপতি মহাবান্দুলা আরাকানের জনগণের  উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায় ও আরাকানবাসীদের  খননকার্যে ব্যবহার করত, পাশাপাশি অসংখ্য আরাকানিকে হত্যা করা হয়। এসময় আতংকে লক্ষাধিক আরকানবাসী নাফনদী অতিক্রম করে বর্তমান কক্সবাজার এলাকায় চলে আসে। এসব লোকদের পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে নিয়োগ প্রদান করেন। হিরাম কক্স দায়িত্ব পাওয়ার পর রামুতে প্রশাসনিক কর্মকান্ড শুরু করেন। আরাকানি শরণার্থীদের পুনর্বাসন করার পরে বাঁকখালি নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পাহাড়ের অগ্গমেধা ক্যাং এর অদূরে সমতল ভূমিতে হিরাম কক্স একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।  এই বাজার কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে কক্স সাহেবের বাজার হতে কক্সবাজার নামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজার সংক্রান্ত  ভৌগলিক তথ্যঃ

১৷ কক্সবাজার হল  বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত জেলা। 

২। কক্সবাজারের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে আন্তর্জাতিক নদী নাফ।


কক্সবাজারের দ্বীপসমূহ নিয়ে আলোচনাঃ

বর্ষণের ফলে ক্রমে ক্রমে পাহাড়- পর্বত থেকে স্রোতবাহী পলি জমতে জমতে জেগে উঠে চর বা দ্বীপ।  এভাবে কক্সবাজারে বিভিন্ন দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মহেশখালি,  কুতুবদিয়া,  সেন্টমার্টিন ইত্যাদি। তাছাড়া আরো দ্বীপের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ,  সোনাদিয়া, কাউয়াড্ডিয়া ও ছিরাদিয়া উল্লেখযোগ্য ৷ কক্সবাজারের দুইটি দ্বীপ ই উপজেলা,তা হলঃ মহেশখালি ও কুতুবদিয়া।

কক্সবাজারের বৃহত্তম নদী কি?
কক্সবাজারের বৃহত্তম নদী হল মাতামুহুরি।

মাতামুহুরি নদীর উৎপত্তিস্থল কোথায়?
মাতামুহুরি নদীর উৎপত্তিস্থল হল  আরাকান ইউমা রেঞ্জ।

কক্সবাজারের ২য় বৃহত্তম নদী কি?

কক্সবাজারের ২য় বৃহত্তম নদী হল বাঁকখালি।

বাঁকখালি নদীর উৎপত্তিস্থল কোথায়?

বাঁকখালি নদীর উৎপত্তিস্থল উত্তর আরাকানের ইউমা পর্বতমালা হতে উৎপত্তি।নাইক্ষংছড়ি হয়ে কক্সবাজার  প্রবেশ করেছে। 

কক্সবাজারের সবচেয়ে উঁচু  চূড়া  কি? 

কক্সবাজারের সবচেয়ে উঁচু  চূড়া হল তুনঙানগা। তুনঙানগা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ৮৮০ ফুট উঁচু। এটি টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ কোনটি?

কক্সবাজার তথা পুরো বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হল সেন্টমার্টিন।

কক্সবাজারের অর্থকরী সম্পদ কি?

কক্সবাজারের অর্থকরী সম্পদগুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ 

১। বনজ সম্পদ 

২। সামুদ্রিক সম্পদ 

৩। পর্যটন শিল্প

 ৪। লবণশিল্প

৫।উপকূলীয় চিংড়ি মাছ

৬। পান

এসব সম্পদ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

টলেমির ভূগোলে কক্সবাজারের কোন অঞ্চলের কথা উল্লেখ আছে? 

টলেমির ভূগোলে কক্সবাজারের প্রাচীন অঞ্চল রামুর কথা উল্লেখ আছে।

কক্সবাজার কিভাবে আরাকানের সম্পর্কিত?

৯৫৩ সালে আরাকান রাজা সুলত ইংগ চন্দ্র চট্টগ্রাম পর্যন্ত জয় করেন। চট্টগ্রাম আরাকান রাজার অধীনস্থ হওয়ায় সারা কক্সবাজার এলাকাও আরাকান রাজার অধীনস্থ হয়।

কক্সবাজার জেলায় মুসলমানদের আগমন কখন?

কক্সবাজার জেলায় মুসলমানদের আগমনের সঠিক দিনক্ষণ নিরুপণ করা সম্ভব নয়।তবে আরব ভৌগলিকদের মধ্যে সোলায়মান ৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিলসিলাত উত তওয়ারিখ নামক একখানা বই লিখেন। তার পরেও কয়েক জন আরব ভৌগলিক একই রকম বই লিখেন। এই গ্রন্থগুলিতে দেখা যায়, আরবেরা চট্টগ্রামের সাথে পরিচিত ছিল। তাছাড়া আরাকান রাজবংশীয় উপাখ্যান হতে আমরা আরাকানের উপকূলের সাথে আরব সংশ্লিষ্টতা পাই। একদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও অন্যদিকে আরাকানের সাথে আরবদের  যোগাযোগ থাকলে মধ্যবর্তী কক্সবাজার উপকূল  বাদ পড়ে না। প্রাচীনকালে চট্টগ্রাম ও আরাকান রাজ্য ছিল অভিন্ন রাজ্য। এই রাজ্য বর্তমানে  আরাকান প্রদেশ হলেও যা চট্টগ্রামের মানুষের কাছে রোসাংগ নামে পরিচিত। এই আরাকান ও চট্টগ্রাম রাজ্যের সেতুবন্ধন ছিল কক্সবাজার এলাকা। 

কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষা কি?

কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষা চাটগাঁইয়া, যা আমরা বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভাষা বলে থাকি।চাটগাঁইয়া ভাষা বাংলা উপ-ভাষার এক অনন্য সংযোজন।  আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের মতে,

 চট্টগ্রামের কথ্য ভাষা বড়ই অদ্ভূত...। লিখিত ভাষার সহিত উহার বৈষম্য খুবই বেশি।এত বেশি যে, চেষ্টা করিলে আসামীয়াদের মতো আমরাও অনায়াসে পৃথক ভাষার সৃষ্টি করিতে পারিতাম।

তবে, কক্সবাজার অঞ্চলের আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাটগাঁইয়া ভাষার উচ্চারণরীতিতে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। কক্সবাজার অঞ্চলের ভাষা রোহিংগাদের উচ্চারণরীতি দ্বারা বেশি  প্রভাবিত।

কক্সাবাজারে ইসলাম প্রসার কখন হয়?

প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামের ইসলাম প্রচার শুরু হয়  ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের আমল হতে।

কক্সবাজার জেলায় কোন জনগোষ্ঠী বাস করে? 

কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন সবচেয়ে বেশি বলে গবেষকদের অভিমত। কক্সবাজারের মুসলমান জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ রোয়াইংগা সম্প্রদায় হতে আগত। কেননা ১৭৮৪ রোহিঙ্গারা আরাকান হতে  পালিয়ে এসে  বসতি স্থাপন করে। বিশেষ করে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই রোহিঙ্গারা আরাকান ছেড়ে কক্সবাজারে বসবাস করতে শুরু করে।

তাছাড়াও প্রাচীনকালে কক্সবাজারের বৃহৎ এলাকা জুড়ে ছিল মংগোলীয় জনগোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত বার্মিজ ও পালি ভাষাভাষী মগ,রাখাইন সম্প্রদায়।পন্ডিতদের মতে আসামের খাসি, বার্মার মন জাতিশ্রেণীর অস্ট্রো এশীয় জনগোষ্টীই কক্সবাজারের অধিবাসী।তাদের সাথে মিশেছে ভোট চীনাগণ। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে এসেছে কুকী চীন।কক্সবাজারের আদিম জনগোষ্টী তাদের অংশ। কক্সবাজারের আদিম জনগোষ্ঠীর সাথে ১৪৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকান বৃহত্তর  চট্টগ্রামে প্রথম রাজ্য স্থাপনকারী রাজা চন্দ্রসূর্যের মগধাগত হিন্দু ও বৌদ্ধ সৈন্যদের ধর্ম প্রচারের ফলে কক্সবাজারে নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধ অধিবাসীর উদ্ভব হয়। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁ'র সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ'র বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিজয়ের পর থেকে সূফি সাধক ও গৌড়াগত মুসলমানেরা ইসলামপ্রচারের ফলে কক্সবাজারে মুসলমান অধিবাসীর উদ্ভব হয়। ডুলাহাজারা খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল স্থাপিত হওয়ায় স্বল্প সংখ্যক স্থানীয় লোক খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে। কক্সবাজার বর্তমানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমান এই চার ধর্মাবলম্বীর আবাসভূমি।

কক্সবাজার জেলায় পৌরসভা  কয়টি?

কক্সবাজার জেলায় পৌরসভা ৪ টি।যথাঃ কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালি।

রামু নামের উৎপত্তি কিভাবে হল?

রামু নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন কিংবদন্তি রয়েছে। তৎমধ্যে একটি হলঃ বনবাসে থাকাকালে রাম ও সীতা এসেছিলেন  রামকোট এলাকায়। রামের নামানুসারে রামকোট বা রামুর নামকরণ হয়েছে। 

কক্সবাজারের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা কর? 

কক্সবাজারের রাজনীতি ও সমাজনীতি ছিল মূলত ভূরাজনীতির উপর নির্ভরশীল। জোতদার ও জমিদারেরা ছিল কক্সবাজারের রাজনীতির হর্তাকর্তা। ভূ রাজনীতির ফলে জেলার স্বাধীন রাজনীতি মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে নি। 

কক্সবাজার ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনঃ

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন  কক্সবাজার অঞ্চলের অসংখ্য ভূমিরাজপুত্র।  তাদের মধ্যে অন্যতম হলঃ- রামুর আব্দুল মজিদ সিকদার- তিনিই কক্সবাজারের প্রথম  ব্রিটিশ রাজবন্দী। 

এছাড়াও ছিলেন হারবাং ইউনিয়নের জালালউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।  তিনি ছিলেন এ,কে ফজলুল হকের বংগীয় বিধানসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। চট্টগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি।  

কক্সবাজারের সন্তান মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ ছিদ্দিকী ছিলেন খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। আব্দুর রশিদ ছিদ্দিকী মোসলেম জগৎ' পত্রিকারও সম্পাদক।

কক্সবাজারের  বিপ্লবী সন্তান সুরেশ সেন  চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ও ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। 

কক্সবাজার ও ভাষা আন্দোলনঃ

কক্সবাজারের সন্তান ফরিদ আহমদ বাংলা ভাষাকে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। বাংলা ভাষার জন্য অন্য কেউ এইরকম দৃষ্টান্ত  স্থাপন করার দুঃসাহস দেখান নি। 


কক্সবাজার ও মুক্তিযুদ্ধঃ


কক্সবাজার কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল?

কক্সবাজার ছিল ১নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল।

১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কে ছিলেন?

১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন  মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর শওকত আলী।

কক্সবাজার কখন হানাদারমুক্ত হয়?

কক্সবাজার হানাদার মুক্ত হয় ১৩ ডিসেম্বর।


কক্সবাজারে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কয়জন?

কক্সবাজারে  খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ৩ জন।বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হল মেজর জিয়াউদ্দিন।বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হল নুরুল হুদা  ও নুরুল হক।

কক্সবাজার জেলার প্রধান শিল্প  কি? 

কক্সবাজার জেলার প্রধান শিল্প হল পর্যটন,  লবণ ও চিংড়ি। বাংলাদেশে খনিজ লবণ না থাকায় সম্পূর্ণরুপে আমরা সামুদ্রিক লবণের উপর নির্ভরশীল।বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ সামুদ্রিক লবণ কক্সবাজারেই উৎপন্ন হয়। 

মগ কারা? কেন মগ নামে ডাকা হয়?

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলভূক্ত রাখাইনদের মগ নামে ডাকা হয়। মগধ থেকে এসেছে বলেই তারা নিজেরাই মগ বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করত।এজন্যই তাদের মগ বলে ডাকা হয়।

মগ জলদস্যু কি?

স্থানীয় রাখাইনদের একশ্রেণীর অসৎ লোক পর্তুগিজদের সাথে মিশে সমুদ্রে জলদস্যুতা তথা লুটপাট করত বলেই তাদের নাম এখানে 'মগ জলদস্যু' হিসেবে খ্যাত হয়েছে। 

ঈদগাঁও নামকরণ কিভাবে হল?

ঈদগাঁও হল কক্সবাজার জেলার অন্যতম থানা। উত্তরাধিকার সংঘাতে সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শা্হসুজা পরাজিত হয়ে আরাকান রাজার আশ্রয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় ছিল  রমজান মাস। শাহসুজার বাহিনী যেদিন ঈদগাঁও এলাকায় পৌছেন সেদিন সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়। তাই রাতে ঈদগাঁওতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। সকালে ঈদগাঁওতে ঈদ-উল-ফিতরের নামায আদায় করেন বলে কথিত আছে। এলাকার লোকজন বিশ্বাস করেন যে, শাহসুজা সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঈদগাঁওতে ঈদ-উল-ফিতরের নামায আদায় করেন বলেই এলাকার নাম ঈদগাঁও হয়েছে।

কক্সবাজারের প্রধান প্রধান  লোকশিল্পগুলো কি?

কক্সবাজারের প্রধান প্রধান  লোকশিল্পগুলো হচ্ছে  মৃৎশিল্প,  বাঁশ-বেত বা কারুশিল্প, নৌ শিল্প, নকশীকাঁথা, আলপনা, দারুশিল্প ও ঝিনুকশিল্প।


বলী খেলার উৎপত্তিস্থল কোথায়?

প্রাচীনকালে বৈশাখি মেলার সাথে বলী খেলা ছিল কক্সবাজার অঞ্চলের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান।বলী খেলার উৎপত্তিস্থল আরাকান বলে প্রবীণদের ধারণা।কেননা আরাকানের বলী খেলার প্রচলন অনেক পূর্ব থেকেই। 


কক্সবাজারের লোকসাহিত্যগুলো  কি কি?

১। ভাটকবিতা

২। লোকছড়া

৩। পুঁথিসাহিত্য ও পুঁথিপাঠ ইত্যাদি


কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য বস্তগত লোকসংস্কৃতি কি কি? 

১।বাঁশ-বেতশিল্প

২।নৌশিল্প

৩। দারুশিল্প

৪।ঝিনুকশিল্প

৫।জালবুনন শিল্প

৬। লবণশিল্প ইত্যাদি

কক্সবাজারে প্রচলিত লোকাচার কি কি?

১। মানত

২। হাদি

৩। আকিকা

৪।শিশুর জন্মের পর শংখধ্বনি  বা আজান

৪।চেহলাম ইত্যাদি।

কক্সবাজারের লোকক্রীড়া কি কি?

১।গুটি খেলা

২। ডাংগুলি

৩।দাড়িয়াবান্দা খেলা

৪।বলিখেলা

৫।ষাড়ের লড়াই ইত্যাদি

কক্সবাজারে লোকচিকিৎসা কি কি?

১।হুইচপড়া

২। পানিপড়া

৩।তেলপড়া

৪।নজরপড়া বা ফোঁয়ার পড়া

৫।ঝাঁড়-ফুক

৬।তাবিজ-কবজ ইত্যাদি