আবুযর গিফফারি (রা) ও সমাজতন্ত্র

আবুযর গিফফারি (রা) ও ইসলামি সমাজতন্ত্র

আবুযর গিফফারি (রা) ও ইসলামি সমাজতন্ত্র

হযরত বিবি খাদিজা (রা), হযরত আবুবকর (রা) ও হযরত আলি (রা) এই তিনজনের পরই আবুযর গিফফারি (রা)  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।নিকটতম এই সাহাবি সম্পর্কে রাসূল (স) বলেছিলেন যে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই ,যে আবুযরের চেয়ে অধিক সত্যবাদী।

তিনি তার সমগ্র জীবনব্যাপী ধনসম্পদের উপর ব্যাক্তিগত মালিকানার বিরুদ্ধে এবং মানুষকতৃক মানুষের শোষণের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যান।তিনি মনে করতেন যে,সমস্ত সম্পদের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর;সুতরাং সম্পদের উপর সকল মানুষের সমান অধিকার।তার মনে প্রয়োজনের অধিক কোন সম্পদ নিজের করায়ত্ত রাখার অধিকার কোন মুসলমানের নেই।মসজিদের ভিতরে-বাইরে,খলিফার দরবারে,জনসমাবেশে,এক কথায় সর্বত্রই তিনি নির্ভয়ে ও জোরালো ভাষায় শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করতেন।এক অর্থে তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম সমাজতন্ত্রী। 

বস্তুত মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্রের সাথে তার মতবাদের মৌল পার্থক্য ছিল এই যে, মার্কসীয় সমাজতন্ত্রীরা আল্লাহ বা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করে না। কিন্তু হযরত আবুবকর (রা) এর দ্ব্যর্থহীন সাম্যের ভিত্তিই ছিল আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (স) ও আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত কুরআন। রাসূল (স) ,হযরত আবুবকর (রা) ও হযরত উমর (রা) এর আমলে কার্যত কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। কিন্ত তৃতীয় খলিফা উসমান (রা) এর আমলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ঘটায় এবং বৈষম্যের উন্মেষ দেখা দেওয়ায় হযরত উসমান(রা) এর সঙ্গে হযরত আবু যর গিফারী(রা) এর তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। তাকে কোনক্রমেই নিরস্ত করতে না পেরে খলিফা তার প্রধান পরামর্শদাতা মারওয়ান এর পরামর্শ মত আবুযর গিফারী(রা) সিরিয়া পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সেখানেও  বিপুল সম্পদের অধিকারী আমির মুয়াবিয়া (রা) এর সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে তিনি নিপীড়িত জনগণকে মুয়াবিয়া (রা) এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এমতাবস্থায় আমির মুয়াবিয়া (রা) আবুযর গিফারিকে নির্মমতার সঙ্গে মদিনায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। মদিনায় ফিরে এসে ফের বৈষম্যমূলক নীতির বিরোধিতা করতে থাকেন এবং অতিরিক্ত কর প্রদান বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। খলিফা নির্দেশ জারি করেন যে জনগণ যেন হযরত আবু যর গিফারী (রা) এর সঙ্গে কোন কথা বার্তা পর্যন্ত না বলে। কিন্তু জনগণ তা মানছে না দেখে খলিফা তাকে মরুভূমির মাঝখানে রাবজ নামক স্থানে নির্বাসিত করেন। এখানে পরম দারিদ্রের মধ্যে ৩২ হিজরির ৮ জিলহজ্ব তারিখে হযরত আবুযর গিফারী(রা) ইন্তেকাল করেন। বস্তুতঃহযরত আবুযর গিফারী(রা) ছিলেন নিখুত কুরআন সুন্নাহভিত্তিক ইসলামি সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ধারার প্রধান উদ্গাতা।