আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে রচনা লিখন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস 

প্রারম্ভিকাঃ

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি?

আমাদের জাতীয় চেতনার উর্বর উৎস এই সুমহান একুশকে কখনো ভোলা সম্ভব নয়।অমর একুশ আমাদের জাতি-সত্তা ও জাতীয় ইতিহাসের একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন,বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম মাইলফলক।এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি যুগপৎভাবে বেদনার অশ্রু আর প্রেরণার আনন্দে ভাস্বর।একুশ আমাদের জাতীয় অহংকার।এ দিবসটি শুধু আমাদের ভাষা শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বটে।নিজের মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পৃথিবীতে কোনো দেশে কোনো কালের বাঙালির মতো বুকের রক্ত দিতে হয় নি।তাই তো বাঙালির শোকের,ব্যথার এই অমর একুশে ফেব্রয়ারি কে সম্মানের সাথে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষার প্রস্তাবঃ

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে।তখন ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারুপে উর্দুর নাম প্রস্তাব করেন।আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রস্তাব করেন বাংলা ভাষার।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মানি অর্ডার ফরম,ডাকটিকিট এবং মুদ্রায় ইংরেজি এবং উর্দু ব্যবহৃত হতে শুরু করে-যা বাঙালির মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।এই সময় পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা,আরবি হরফে বাংলা লেখা ইত্যাদি ব্যাপারে সভা-সমিতি ও সংবাদপত্রে প্রচারণা শুরু করে দেন।বাংলা উপেক্ষিত হচ্ছে দেখে ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সংবিধান তৈরির জন্য গণপরিষদের প্রথম বৈঠক বসে।এই বৈঠকে শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষাকে সংবিধানের ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান,পূর্ববাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন।ফলে প্রস্তাবটি গ্রাহ্য হয় না।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিঃ

ভাষার অধিকারের জন্য জনগণের সংগ্রাম ও অতুলনীয় আত্মত্যাগ অকস্মাৎ এসে হাজির হয় নি।দেশ বিভাগের পরেই এদেশে এ সংগ্রাম শুরু হয়।রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে একটি জাতিকে অবদমিত করে রাখার বিরুদ্ধে এই তীব্র আন্দলন সংঘঠিত হয়।ভাষার দাবি আদায়ের সংগ্রাম ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পরিণতি লাভ করলেও এর সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর "Urdu and Urdu alone shall be the state language of Pakistan" ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদে।পরবর্তীতে এই আন্দোলন আর শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।স্বেচ্ছাচারী সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে।কিন্তু ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নামলে পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে।এতে সালাম,রফিক,জব্বার,বরকতসহ আরো অনেকে শহীদ হন।এই জঘন্য হত্যাকান্ডের কথা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।ক্ষুব্ধ কবি দৃপ্ত কণ্ঠে বলে ওঠেন-

স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?

ভয় কি বন্ধু,আমরা এখনো

চার কোটি পরিবার

খাড়া রয়েছি তো।যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্যে

পারেনি ভাঙতে।

-আবদুল গাফফার চৌধুরী।

আতঙ্কিত সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।এভাবে অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে বাংলা ভাষা অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায়।

১৯৫৪ সালের স্বীকৃতিঃ

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের খবর সারা দেশে বিদ্যুদ্বেগে পৌছে যায় এবং দেশবাসী প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানগণ পাকিস্তান কর্তপক্ষকে পূর্ব বাংলার ভাষার দাবি মেনে নেওয়ার জন্য অনবরত চাপ দিতে থাকে।যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদাঃ

একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে বাঙালি জাতির প্রাণের আবেগ এবং উচ্ছ্বাসই তাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নিয়ে যায়। ১৯৯২ সালে ভারতের বাংলাভাষী রাজ্য ত্রিপুরা ঘোষণা করে,তাদের রাজ্যে তারা একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ভাষা দিবস হিসেবে পালন করবে।পরে পশ্চিম বাংলায়ও বেসরকারিভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।তবে সরাসরি একুশের আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রথম দাবি আসে বাংলাদেশের গফরগাঁও থেকে। ১৯৯৯ সালের ৩০ এ নভেম্বর বাংলাদেশ অবজারভার চুয়াডাঙ্গা থেকে জনৈক এম এনামুল হকের একটি চিঠি প্রকাশ করে।তিনি বলেন,১৯৯৮ সালের ২৫ শে মার্চ তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব কোফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দানের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর স্বীকৃতিঃ

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে সর্বপ্রথম সচেষ্ট হন কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম।এ দুজন আর কয়েকজন মাতৃভাষাপ্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তলেন মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড নামক সংস্থা। ১৯৯৮ সালে এ সংস্থার পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন পাঠানো হয়।কিন্তু বেসরকারি সংস্থা হওয়ায় তা অগ্রাহ্য করা হয়।অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবটি জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১ তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশ অত্যন্ত আনন্দের সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে।বাঙালি জাতির জন্য এ স্বীকৃতি এক অভাবনীয় অর্জন।ড. এনামুল হক বলেন-

একুশে ফেব্রুয়ারি কোনো বিশেষ দিন,ক্ষণ বা তিথি নয়,একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস।এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ,একেবারে জীবন্ত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষামেলাঃ

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করার প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় বিশ্ব ভাষামেলার।মেলায় বিশ্বের ১৮০ টি দেশের পতাকা,বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার ১৫০ প্রকারের বর্ণমালার নমুনা,বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা,লেখক পরিচিতি,দেশ পরিচিতি,মানচিত্র,মুদ্রা,ব্যাংক নোট ও আনুষঙ্গিক তথ্য ভাষামেলায় উপস্থাপন করা হয়।এতে আর উপস্থাপন করা হয় বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাস, পান্ডুলিপি, শিলালিপি, ফলকচিত্র, টেরাকোটার প্রামাণ্য দলিল- ছবি। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর আনন্দ উৎসবঃ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাতৃভাষা দিবস উৎসবের আয়োজন করে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর।উৎসবটি পালিত হয় ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে।আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে দিনভর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনন্দ, শোভাযাত্রা, আলোচনা, নৃত্য,সংগীত,আবৃতি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত হয় এ উৎসব।

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস ও অন্যান্য ভাষাঃ

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের প্রধান লক্ষ্য হলো-বিশ্বের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর আপন আপন মাতৃভাষাকে সম্মান জানানো এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার ও বিকাশকে স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান।সুতরাং মনে রাখতে হবে,বাঙালি জাতি তাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেভাবে আত্মাহুতি দিয়েছে,হৃদয়ের আবেগ ও বুকের রক্ত দিয়ে তেমনি আপন আপন মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার অধিকারও সবার রয়েছে।অন্যভাষার প্রতি বৈরিতা নয় বরং বিশ্ব সমাজ গঠনে প্রতিটি ছোট বড় ভাষার প্রতি সম্মানবোধও এই বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস উৎযাপনের অন্যতম লক্ষ্য হবে।

মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাঃ

২০০০ সালের জুলাই মাস থেকে রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র চালু হয়েছে।এখানে বিশ্বের সব ভাষাসহ বিলুপ্ত ভাষাসমূহ সংগ্রহ,সংরক্ষণ,চর্চা ও গবেষণা করা হবে।এ গবেষণা কেন্দ্রের নাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।এই গবেষণা কেন্দ্রে রিসার্চ,মিউজিয়াম এবং একটি আধুনিক তথ্য সেল রাখা হয়েছে।ভাষার উপর গবেষণা এবং মিউজিয়ামে বিভিন্ন ভাষার নমুনা বা সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি সংরক্ষণ করা হবে।

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস ও বাঙালির করণীয়ঃ

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি বাঙালির ও বাংলা ভাষাভাষীর দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।পৃথিবীর জ্ঞানচর্চার যে ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে সে তুলনায় বাংলা ভাষার এখনো কাজ করার অনেক বাকি।সেজন্য শুধু আবেগ-উদ্দীপনায় উচ্ছ্বসিত হলে চলবে না-বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু উৎসবের নাম নয়,দায়িত্বেরও।এখন বহির্বিশ্বকে আমাদের জানাতে হবে একুশে ফেব্রুয়ারি কি,কেন এই দিবসের এত বড় তাৎপর্য,কোথায় এর এতো ব্যাপক শক্তি।কীভাবে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা পৌছুলাম।দেশের ভিতরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে এবং সরকারি এবং বেসরকারিভাবে।পিছিয়ে থাকা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।বাংলা ভাষাকে ব্যাপক অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে যেতে হবে।আমাদের গভীর বিশ্বাস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর মানুষকে পরস্পরকে জানার আগ্রহে উদ্বুদ্ধ করবে।আমাদের জাতীয়,রাষ্ট্রীয় এবং ব্যাক্তিগত জীবনে বাংলার প্রয়োগকে আরো সমুন্নত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর গুরুত্বঃ

অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর মর্যাদা লাভ করায় প্রথম আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি সারা বিশ্বের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন,রক্তের বিনিময়ে ভাষার যোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার গৌরবগাঁথা সকল দেশের আলোচনয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে।আন্তর্জাতিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃত হওয়ায় আমরা বিশ্ব ইতিহাসের অন্দর মহলে প্রবেশ করেছি।বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অধ্যায় বিশ্ব ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে রূপান্তরিত হয়েছে।এখনো যারা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণে সংগ্রামরত রয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে,তারা এই দিনে নতুনভাবে সঞ্জীবিত হবেন।ঢাকার শহীদ মিনার হয়ে উঠবে নতুন সংগ্রামের পবিত্র স্বারক,বিজয়ের প্রতীক।আর সমগ্র জাতি ভাষা সৈনিকদের কার্যক্রম ও ভাষা-শহীদদের পুণ্য স্মৃতি স্মরণ করে নতুনভাবে প্রেরণা লাভ করবে।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র জাতি ও তাদের ভাষা গোষ্ঠীকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হতে উদ্বুদ্ধ করবে।এসব কারণে মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্যঃ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর।একুশের সংগ্রাম শুধু ভাষা সংরক্ষরণের সংগ্রাম ছিল না,ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট জীবনবোধ সংরক্ষণ,সাহিত্য সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ,বাধা-বিপত্তির মধ্যেও যে আমরা আমাদের মাথা সোজা রাখতে সক্ষম,সেই ঘোষণার মূর্ত প্রতীকও একশে ফেব্রুয়ারি।কোনো অন্যায় প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরই হলো একুশে ফেব্রুয়ারি।ভাষা একদিকে যেমন জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক,অন্যদিকে তেমনি তার স্বপ্নসাধ পূর্ণ করার নির্দেশকও।ভাষায় যেমন কোনো জাতির অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য মূর্ত হয়ে ওঠে তেমনি ভবিষ্যতের নির্দেশ দানেও সহায়তা করে।একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন এ জাতির জীবনে একটি মহত্তর দিবস,শহীদ মিনারও তেমনি এ জাতির একটি পবিত্রতম স্থান।জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মিলন কেন্দ্র।সংকটকালে জাতি এই মিলন কেন্দ্রে বারেবারে ফিরে আসে।বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি মর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধকরণই বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য।তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য ব্যাপক।

উপসংহারঃ

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি

তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।

ওগো মা তমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে

তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

আমরা একুশ শতকে পদার্পণ করেছি।আমাদের জাতীয় জীবনে গত শতক ছিল আশা-আকাঙ্ক্ষা,সংগ্রাম,যুদ্ধে ভরা টালমাতাল দিন।ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে।এদেশের মানুষ মাটির গন্ধ বড় বেশি ভালোবাসে।তাই তারা ভালোবাসে মাটির মাকে,আর মায়ের মুখের ভাষাকে।বাংলা মায়ের সন্তানেরা বিশ্বের বুকে নতুন শতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য আজ দৃঢ়প্রত্যয়ী।আর সে জন্য আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাতৃভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।


আজ এই পর্যন্ত ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে রচনা লিখন ।আরো পড়তে চাইলে, 

সময়ানুবর্তিতা/সময়ের মূল্য নিয়ে রচনা লিখন

নিয়ামানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে রচনা 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে রচনা 

Next Post Previous Post
8 Comments
  • মো রাসেল রানা
    মো রাসেল রানা January 21, 2023 at 9:21 PM

    অনেক সুন্দর একটা পোস্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।

    • বিহঙ্গম/bihongom
      বিহঙ্গম/bihongom April 15, 2023 at 1:10 AM

      অনেকগুলো ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।

  • Anonymous
    Anonymous February 8, 2023 at 10:53 AM

    বানান গুলো ভুল আছে অনেক

    • বিহঙ্গম/bihongom
      বিহঙ্গম/bihongom April 15, 2023 at 1:16 AM

      অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে,বানান সমস্যাসমূহ ফন্টের কারণে ঠিক করা যাচ্ছে না।

  • Anonymous
    Anonymous May 23, 2023 at 9:13 PM

    খুব ভালো হয়েছে

    • বিহঙ্গম/bihongom
      বিহঙ্গম/bihongom June 20, 2023 at 7:37 PM

      অনেকগুলো ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।

  • Anonymous
    Anonymous June 14, 2023 at 3:15 PM

    অনেক ভালো রচনা। শুভকামনা রইলো।

    • বিহঙ্গম/bihongom
      বিহঙ্গম/bihongom June 20, 2023 at 7:38 PM

      অনেকগুলো ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।

Add Comment
comment url