বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে রচনা লিখন

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে রচনা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা


ভূমিকাঃ


দেশে দেশে কত নগর রাজধানী
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু
কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  


আর সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ এসব অজানাকে জানতে চাই, অবলোকন করতে চাই সুন্দরকে, আবিষ্কার করতে চাই নতুনকে। অনুসন্ধিৎ্সু মনের সহজাত তাড়নায় সে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে।বিপুলা পৃথিবীর বিশাল আয়োজনে রয়েছে নাম না- জানা ভূখণ্ড, বিচিত্র মানবসমাজ, বর্ণিল জীবনধারা, নদী- নির্ঝর, গিরি- পর্বত, অরণ্য-কান্তার ইত্যাদি সৌন্দর্য-পসরা। লীলাবতী প্রকৃতি অপার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সৌন্দর্য- পিয়াসী ভ্রমণবিলাসী মানুষ সেই অজানা সুদূরের আহবানে বেরিয়ে পড়ে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য- রোমাঞ্চিত মুক্তাঙ্গনে।বিভিন্ন দেশে এই পর্যটন শিল্প আজ এক নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। ব্যাপক কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পারে পর্যটনসমৃদ্ধ অর্থনীতির গর্বিত দেশ।

পর্যটক ও পর্যটন এর স্বরূপঃ

জীবন- জীবিকার অন্বেষণে ক্লান্ত-অবসন্ন মানুষ একটু অবসর চায়, চায় খানিকটা বিশ্রাম।এই অবসর ও বিশ্রামের প্রয়োজনে সে ছুটে যায় প্রকৃতির কোলে। প্রকৃতির রূপ- রস- গন্ধের সান্নিধ্যে এসে জুড়ায় তাপিত জীবনের সকল ক্লান্তি।আর তখনই সে হয়ে ওঠে পর্যটক।বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সংজ্ঞা অনুসারে একজন পর্যটক হলেন অস্থায়ী পরিব্রাজক। আর পর্যটন বলতে মানুষ যেখানে স্থায়ীভাবে বাস করে, সেখান থেকে অন্য কোনো স্থানের উদ্দেশ্যে সামরিক গমনাগমনকে বুঝায়।

পর্যটনের ইতিকথাঃ

বিশ্বের পর্যটনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। ইতিহাস থেকে জানা যায় চতুর্দশ দশকের ফখরুদ্দিন শাহর শাসনামলে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সুদূর আফ্রিকার মরক্কো থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন।এর কিছুদিন পরে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহর আমলে চীন থেকে হিউয়েন সাং তখনকার বাংলাদেশের রাজধানী সোনারগাঁও পরিভ্রমণে এসেছিলেন। ভাস্কো-দা-গামা পর্যটন করেছিলেন এশিয়ায়।ফলে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে স্থাপিত হয়েছিল মৈত্রীবন্ধন। কলম্বাসের পর্যটনে নতুন মহাদেশ আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল। আজও বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন স্থাপনে অনন্য ভূমিকা পালন করে পর্যটন।

শিল্প হিসেবে পর্যটনঃ

সুদূর অতীতকালে খেয়াল কিংবা শখের নেশায় মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করলেও বর্তমানে পর্যটন একটি অনন্য শিল্পে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে পর্যটন শিল্প। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর আজ অনেক উন্নত।

পর্যটনের উপাদানঃ

পর্যটক আকর্ষণের প্রধান উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, পুরাতাত্ত্বিক এবং পৌরাণিক উপাদান ও নিদর্শনসমূহ তুলে ধরা।যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি, থাকা- খাওয়ার সু-ব্যবস্থা, চিত্তবিনোদনের ন্যূনতম উপকরণ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান কিংবা তীর্থস্থানে দর্শনার্থীদের গমনাগমন কে কেন্দ্র করেও পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে।

বিশ্বে উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রঃ

সাইপ্রাসের সি-বিচ, মিশরের পিরামিড, নায়াগ্রা জলপ্রপাত, ইতালির টম ব্রিজ, রোমের কলাসিয়াম, বেবিলনের ঝুলন্ত বাগান, চীনের মহাপ্রাচীর, আইফেল টাওয়ার অফ ফ্রান্স, গোল্ডেন ব্রিজ অব শিকাগো, আগ্রার তাজমহল, নেপালের এভারেস্ট শৃঙ্গ, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট, পাকিস্তানের হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, স্পেনের অ্যাজটেক সভ্যতা, ইসরাইলের আল-আকসা মসজিদ, ইউরোপের ভ্যাটিকান সিটি, ইতালির জলমগ্ন ভেনিস নগরী, গ্রেট বেরিয়ার রিফ, আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম ব্ল্যাক হিলস, বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি পর্যটনের বিশেষ দর্শনীয় স্থান।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাঃ

পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনা- সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ, শ্যামল- শোভন বন-বনানী, উঁচু-নিচু পাহাড়, সুকণ্ঠি পাখির কলকাকলি, দেশ জোড়া রুপালি নদীর বিস্তার, ঋতুতে ঋতুতে রঙ আর রুপের অপরুপ বর্ণিল শোভা সবকিছু মিলে এদেশ সৌন্দর্য মহিমায় অনন্য। দেশ-বিদেশের ভ্রমণকারীদের পর্যটন সুবিধা দিতে সরকার তাই এদেশে গড়ে তুলেছে পর্যটন শিল্প।এ শিল্প এখনো নানা কারণে তেমন বিকশিত না হলেও এর সম্ভাবনা প্রচুর, উন্নয়নও অপরিহার্য। সপ্তম শতাব্দীতে প্রখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে ভ্রমণে এসে আনন্দে উল্লসিত হয়ে বলেছিলেন- 

A sleeping beauty emarging from mists and water. 

আর এ বর্ণনা সত্য। বাংলাদেশের যেদিকেই তাকানো যায় সবুজ আর সবুজ। শহর থেকে আরম্ভ করে গ্রাম-গ্রামান্তরে অরণ্যানী সর্বত্রই যে পর্যটনের স্থান। এছাড়াও বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময়ী দিক গুলো রয়েছে সেগুলো হলো-

  • পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত।
  • বিশ্বের অন্যতম বন- সুন্দরবন। সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট নদী, গাছপালা,হরিণ, জীবজন্তু মানুষকে কাছে টানে।এছাড়াও দেশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়-টিলা, চা- বাগান যা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। এসব জিনিস সহজেই পর্যটকদেরকে আরো কাছে টানে।
  • প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়।যেমন- পাহাড়পুর, মহাস্থানগড় প্রভৃতি স্থান।
  • অসংখ্য ধর্মীয় তীর্থস্থান পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ এর বিষয়। যেমন- সিলেটের হযরত শাহজালালের মাজার, চট্টগ্রামের রাউজানের মহামুনি বিহার প্রভৃতি।
  • মাধবকুণ্ড ঝর্ণাধারা হতে পারে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
  • সিলেটের জাফলং পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়।
  • উপজাতীয় জীবনধারা, সাধারণ মানুষের জীবনধারা, এসবও হতে পারে পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ। 

বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের সমস্যাঃ

পর্যটন শিল্পখাতে আমাদের অবস্থা অনেকটাই অনুল্লেখযোগ্য। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশের পর্যটন শিল্পের আয় ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আছে। পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবেই চান স্বল্প সময় ও কম খরচে নিরাপদ ভ্রমণ। এখনো পর্যটন স্পটসমূহে উন্নত হোটেল ও উন্নত খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। পর্যটকরা বাংলাদেশে প্রায়ই হয়রানি ও ছিনতাইয়ের শিকার হন। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না থাকলে পর্যটক ক্রমেই কমে যাবে। এখন পর্যন্ত কোন শহরকে আমরা পর্যটন নগরী হিসেবে ঘোষণা করতে পারিনি। আমাদের বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে উপযুক্ত পরিকল্পনা ছাড়াই। আমাদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা প্রায়ই পর্যটকদের অনুকূলে থাকে না। ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস, হরতাল, বিক্ষোভ- মিছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কে যেখানে ব্যাহত করে, সেখানে পর্যটকদের অর্থ খরচ করে বেড়ানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। এছাড়াও আছে-

১। রাজনৈতিক অস্থিরতা

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী কাল থেকে আরম্ভ করে অদ্যাবধি আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।

২। অবকাঠামোগত দুর্বলতা

পর্যটন শিল্পে অবকাঠামোগত দিক থেকে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এদেশের পরিবহন ব্যবস্থা মান্ধাতার আমলের। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল।রাস্তাঘাট সংকীর্ণ, ভঙ্গুর এবং সর্বত্র যানজট। পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনুন্নত ও অবহেলিত।

৩। উন্নত সেবা এবং তথ্যের অভাব

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে উন্নত সেবা এবং তথ্যের অনেক অভাব রয়েছে। এখানে দক্ষ, শিক্ষিত এবং মার্জিত জনবলের পাশাপাশি দ্রুত তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অসুবিধা রয়েছে।

৪।সামাজিক সমস্যা

বিদেশি পর্যটকদের সংস্কৃতিকে এ দেশে অনেকেই সহজভাবে নিতে পারে না। তাদের প্রতি, দুর্ব্যবহার, নেতিবাচক মনোভাব অনে্কেই পোষণ  করে থাকে। অনেক সময় পর্যটকেরা দুষ্ট লোকের পাল্লায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এগুলো পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও বাংলাদেশঃ

পর্যটন শিল্প বিশ্বের এক অন্যতম বৃহৎ শিল্প। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্প নানাভাবে অবদান রাখতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এই শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাছাড়া পর্যটন শিল্পের কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বেকারত্ব দুর হচ্ছে। কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তৈরি হচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটন শিল্প আমাদের বেকারত্ব দূরীকরণসহ, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি সৃষ্টি প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পর্যটন শিল্পঃ

একথা অনস্বীকার্য যে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পর্যটনশিল্প এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। থাইল্যান্ড, কাশ্মীর, ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র পথ হলো পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশে যেখানে রপ্তানি পণ্য খুবই কম, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কোনো উৎসই যেখানে শক্তিশালী নয়; সেক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে একটি বিরাট উৎস হতে পারে।

দেশীয়দের পাশাপাশি বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণঃ

সারা বিশ্বজুড়েই এখন পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ে ঘোরতর প্রতিযোগিতা চলছে। আয় বাড়াতে চাইলে আমাদেরও সেই প্রতিযোগিতায় সত্যিকারের প্রতিযোগীর মতো শামিল হয়ে পর্যটক আকর্ষণ করতে হবে। এজন্য অর্থ, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি খাটিয়ে এই সম্ভাবনাময় শিল্পটিকে সবদিক থেকে আকর্ষনীয় করে তুলবার পদক্ষেপ নিতে হবে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন দেশ তাদের অতীত কীর্তি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন শুধু সাজিয়েই তোলে নি, পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে তুলেছে। ফলে এই সমস্ত কেন্দ্রে দেশি বিদেশি পর্যটকদের খুব ভীড় পরিলক্ষিত হয়। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, দেশের সাধারণ জনগণ অল্প ব্যয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেন পরিদর্শন করতে পারে। পর্যটন সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচিও আমাদের নেই। এর ফলে দেশে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি বা দেশে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে না। তাই আমরা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেক দেশে দেখা যায়, রাজস্ব আয় এর অন্যতম উৎস হিসেবে তারা পর্যটন কে নির্বাচন করে দিয়েছে এবং তা তাদের সুপরিকল্পিত ফলে অনেকখানি সফল হয়েছে। অথচ আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই আছি। কিন্তু এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে পর্যটনে দেশী-বিদেশী সকল ধরনের পর্যটকদের আকর্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয়ঃ

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই দূর করতে হবে। সর্বপ্রথমে দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য উন্নত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে-

প্রথমত,

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার সি-বিচের যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। কক্সবাজারকে পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করে এর অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন করতে হবে। তাছাড়া কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। উন্নত সড়ক ব্যবস্থা, বিমানবন্দরে স্থাপন এবং উন্নত হোটেল ও বন্দর সৃষ্টি করে এখানে পর্যটক আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বিদেশিদের আকর্ষণ করতে সুন্দরবন ওয়াইল্ড লাইফ পর্যবেক্ষণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত,

পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। প্রধান প্রধান শহরে এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বেসরকারি পর্যটন উদ্যোগকে উৎসাহিত করে বেশি সংখ্যক দর্শকের আগমন ঘটানো যেতে পারে। বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির ধারা আন্দোলিত। এর ব্যাপক ব্যবহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিভিন্ন স্থানকে জানা ও সহজে অবলোকন করার সুযোগ করে দেয়।জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাপকভাবে পর্যটনখাতের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগক্তাদের আহ্বান জানানো উচিত।

তৃতীয়ত,

পর্যটন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।হোটেল সার্ভিস,রান্নার গাইড,বিদেশীদের সাথে কন্ডাক্ট ইত্যাদি বিষয়ে যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে এবং যুবকদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।

চতুর্থত,

বিপুল প্রচারের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় ও গতিশীল করা যেতে পারে।বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করতে হবে।দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে, যানজট- হরতাল- অবরোধ না থাকলে, চলা- ফেরা এবং ভ্রমণে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে এর ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিতভাবে পর্যটনের উপর পড়বে।পর্যটকদের সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের সম্পর্ক হবে অকৃত্রিম, বন্ধুত্বপূর্ণ, অতিথিপরায়ণ এবং আচরণ হবে অতি আপনজনের মতো, যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা নিয়ে বিদেশীরা ফিরে যেতে পারে।  

উপসংহারঃ

অর্থনৈতিক অবদানের পাশাপাশি সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে ভ্রাতৃত্ব ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় পর্যটন শিল্পের অবদান অপরিসীম।আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, নৈসর্গিক দৃশ্য সবই পর্যটন শিল্পের অনুকুলে।এখন শুধু প্রয়োজন সুস্থ- স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দেশপ্রেম।পাশাপাশি নিসর্গ- সমৃদ্ধ সুন্দর বাংলাদেশকে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।পর্যটন যে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প, সেটা বিবেচনায় রেখে এই শিল্পে দেশি- বিদেশী, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ করতে হবে।অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনার মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে।


এই পর্যন্ত ছিল বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে রচনা। আরো পড়তে চাইলে,

সময়ানুবর্তিতা/সময়ের মূল্য নিয়ে রচনা লিখন

নিয়ামানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে রচনা 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে রচনা 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে রচনা