রিদ্দা যুদ্ধ উল্লেখপূর্বক আবু বকর (রাঃ) সময়ের যুদ্ধ

রিদ্দা যুদ্ধ উল্লেখপূর্ব আবু বকর (রাঃ) সময়ের যুদ্ধ

আবু বকর (রাঃ) সময়ের যুদ্ধ

আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফত লাভ ছিল ইসলামি ইতিহাসের একটি ভয়াবহ সঙ্কটময় পরিস্থিতির পরিসমাপ্তি।কিন্তু তার সংক্ষিপ্ত শাসনামল (৬৩২-৬৩৪) ছিল আরো সঙ্কটময়।তার অধিকাংশ সময় আরবের পুনঃঐক্য সাধনে অতিবাহিত হয়।ধর্মত্যাগীরাই তার খিলাফতের অন্যতম সমস্যা ছিল এবং তাদের নিয়েই আবু বকর (রাঃ) এর বেশি মাথা ঘামাতে হয়েছিল।

আবু বকরের সময়ের যুদ্ধাবস্থাকে সাধারনভাবে তিন ভাগে প্রকাশ করা যায়।

  • ১ম ভাগঃ-প্রতিশোধ
  • ২য় ভাগঃ-রিদ্দা বা স্বধর্মত্যাগীদের যুদ্ধ
  • ৩য় ভাগঃ- রাজ্যবিস্তার

প্রতিশোধঃ

মুহাম্মদ (সঃ) এর শাসনামলে সোহরাবিল নামক এক সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা মুসলিম দূতকে হত্যা করে।এই ঘটনায় মুহাম্মদ (সঃ) খুবই মর্মাহত হন ও যুদ্ধ ঘোষণা করেন।মুতাহ নামক স্থানে যুদ্ধ শুরু হয় এবং হযরত প্রেরিত নেতা তারই দত্তকপুত্র যায়েদ ইবন-হারিস নিহত হন।বিপর্যস্ত সেনাদলের অবশিষ্টাংশ খালিদ বিন-ওয়ালিদের নেতৃত্বে মদীনায় ফিরে আসেন।এই মুতাহ অভিযানের ফলে আরবের উত্তর প্রদেশস্থ গোত্রসমূহ মুসলমানদের পক্ষ ত্যাগ করে।যায়েদ হত্যার প্রতিশোধের জন্য মুহাম্মদ (সঃ) যায়েদ পুত্র উসামাকে সিরিয়া অভিযানে প্রেরণে মনস্থ করেন।কিন্তু নবী (সঃ) এর মৃত্যুতে উসামার অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।পরবর্তীতে আবু বকর (রাঃ) যায়েদ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ,উত্তর প্রদেশসমূহে শান্তি স্থাপন এবং মুহাম্মদ (সঃ) এর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে উসামাকে সিরিয়া অভিযানে প্রেরণ করেন।উসামা তরুণ ও অনভিজ্ঞ থাকায় নেতৃস্থানীয় মুসলমানগণ বিরোধিতা করলেও আবু বকর তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।সিরিয়া অভিযান সাফল্য লাভ করে।উসামা বিজয়ীবেশে  প্রায় চল্লিশ দিন পর মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।এই অভিযান মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

উল্লেখ্য যে,

ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে,মুতাহ অভিযানের আপাত উদ্দেশ্য ছিল দূত হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া।আসল উদ্দেশ্য ছিল মুতাহ ও সংলগ্ন শহরগুলিতে প্রস্তুত মাশরাফিয়া তরবারি সংগ্রহ করা,যাতে আসন্ন মক্কা আক্রমনের সময় সেগুলিকে ব্যবহার করা যায়।


রিদ্দা যুদ্ধঃ

নবী (সঃ) মৃত্যুর পরপরই মদিনা ব্যতীত সমগ্র আরবে চরম অন্তবিপ্লবের সৃষ্টি হয়।বিভিন্ন গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগণ ইসলাম ধর্মকে বর্জন করে এবং খলীফার আধিপত্যকে অস্বীকার করে ইসলামের বিরুদ্ধে একটি সুসংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলে।কতিপয় ভন্ড নবীর আবির্ভাব ঘটে,লোকজন যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।তারা উম্মাহ থেকে বের হয়ে পূর্বের মতো স্বাধীন যাযাবর জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে।স্বধর্মত্যাগী ও ভন্ড নবীদের বিরুদ্ধে আবু বকর (রাঃ) এর নেতৃত্বে অভিযানই হল রিদ্দার যুদ্ধ।


রিদ্দা যুদ্ধের কারণঃ

রিদ্দা যুদ্ধের অনেকগুলো  কারণ ছিল। নিচে রিদ্ধা যুদ্ধের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলঃ

১। রিদ্দা যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিলঃ মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবদ্দশায় আরব উপদ্বীপের এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ তার ধর্ম ও শাসন মেনে নেয়নি।কারণ,যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে প্রচারকার্য চালানো সম্ভব হয়নি।মুহাম্মদ (সঃ) সময়ও পেয়েছিলেন কম।নবী (সঃ) এর মৃত্যুর পূর্বে দুই-এক বৎসর আগে হিজাজ প্রদেশের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।তাছাড়া,সুনিয়ন্ত্রিতভাবে  ধর্ম প্রচার ব্যবস্থার অভাব ছিল।

২।গৃহীত যাকাত প্রদানে বিদ্রোহীদের অনিচ্ছা ছিল।ইতিপূর্বে কোন শাসকগোষ্ঠীকে তারা যাকাত প্রদান করেনি,তাই এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত ছিলনা।যাকাত প্রদান তাদের স্বাধীন জীবনযাত্রার অন্তরায় ছিল, ফলে রিদ্দা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে।

৩।ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ বেদুঈনদের ব্যাক্তি-স্বাতন্ত্র্যবোধে আঘাত হানে।ইসলামের নৈতিক শৃঙ্খলা,বিধিব্যবস্থা তাদের অন্তরে স্থান পায়নি।নৈতিক নিয়মাদিতে স্বাধীনচেতা বেদুঈনরা অভ্যস্থ ছিলনা।মূলত ভ্রাতৃত্ববোধ,উম্মাহব্যবস্থা ও কঠোর নৈতিক নিয়মাদি তারা মেনে নিতে পারেনি।

৪।তাছাড়াও রিদ্দা যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিলঃ আরব গোত্রসমূহ কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থেকে মদিনার প্রাধান্য ও  কর্তৃত্ব   মেনে নিতে পারেনি।


রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনাঃ

সেনাপতি উসামা সিরিয়া অভিযানে যাওয়ার কিছুদিন পর মদিনা অরক্ষিত আছে জানতে পেরে বিদ্রোহী গোত্রগুলি মদিনাকে ঘিরে ফেলে।কিন্তু আবু বকর তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিরক্ষার জন্য তৈরী হন।মূল সেনাবাহিনী উসামার সাথে ছিল।তাই,নিজ গোত্র বনু হাশিম থেকে লোক সংগ্রহ করেন।তিনি আলি (রাঃ) ,তালহা (রাঃ) ও জুবাইরের সহায়তায় ধূলকাশা নামক স্থানে বিদ্রোহীদের আকস্মিক আক্রমণ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।এরপর,উসামার বাহিনী সিরিয়া প্রদেশ জয়লাভ করে মদিনা প্রত্যাগমন করেন।আবু বকর (রাঃ) কয়েকটি দল নিয়ে সেনাবাহিনী  গঠন করেন।খালিদ বিন ওয়ালিদের সেনাদলটি সেনাবাহিনীর মূল ও সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী ছিল।বিদ্রোহীদের শক্তিশালী বাহিনীর সাথে লড়াইয়ের জন্য এদেরকে ব্যবহার করা হয়।বাকি সেনাদের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হয়।প্রথমে খালিদের বাহিনী অপারেশনে যেত।অন্যান্য বাহিনীগুলো অপারেশনের সময় খালিদের বাহিনীর উপর নির্ভর করত।আবু বকরের পরিকল্পনা ছিল মধ্য পশ্চিম আরবকে শত্রুমুক্ত করা এরপর মালিক ইবনে নুয়াইরার মোকাবেলা করা এবং শেষে সবচেয়ে দুর্ধষ প্রতিপক্ষ মুসায়লামার মোকাবেলা করা।এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলমানরা এগিয়ে যায় ও অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। এছাড়া বাহরাইন,উমান,হাযরামাওত ও ইয়ামানে বিভিন্ন মুসলিম সেনাপতিরা অভিযান চালান এবং সাফল্য অর্জন করেন। এই সব অভিযানের মধ্যে তোলায়হা, নুবিয়া, সাজাহ ও মুসায়লামার অভিযান উল্লেখযোগ্য ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ছিল  মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযান।

১।তোলায়হাঃ

তোলায়হা একজন গণক ও জাদুঘর ছিলেন, পাশাপাশি তিনি ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেন।নবী (সঃ) এর শেষ জীবনে তিনি নিজেকেই নবী বলে দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে নবী (সঃ) সৈন্যদল পাঠান কিন্তু তারা রাসূলের মৃত্যুর খবর পেয়ে যুদ্ধ অসম্পূর্ণ রেখে মদিনা ফিরে আসেন। পরবর্তীতে খলিফা আবু বকর খালিদ বিন ওয়ালিদকে তোলায়হার বিরুদ্ধে অভিযানের ভার অর্পণ করেন। উভয়পক্ষের তুমুল লড়াইয়ের পর খালিদের যুদ্ধকৌশল ও তেজস্বিতায় তোলায়হা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে সিরিয়া পালিয়ে যান।পরবর্তীতে নিজের গোত্র ইসলামে ফিরে আসায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি পরে  উমর( রা) এর সময়ে ইরাক অভিযানে বীরত্ব প্রদর্শন করেন।


২।মালিক বিন নুবিয়া ও সাজাহঃ

মালিক বিন নুবিয়া ছিলেন ইয়ারবু উপগোত্রীয় নেতা। পরবর্তীতে সাজাহ নামক নতুন এক মহিলা ভন্ড নবীর উত্থান হয়, যার পূর্বপুরুষগণ ইয়ারবু গোত্রের ছিল। অনেক গোত্র প্রধান সাজাহ এর নবুয়ত মেনে নিল, এর মধ্যে বহু খ্রিস্টানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। একসময় মালিক বিন নুবিয়ার সাথে সাজাহর আপোস হয় কিন্তু পরে সে সাজাহর বাহিনী থেকে পৃথক হয়। এদিকে খালিদ তোলায়হাকে দমনের পর বুঝাখায় একমাস অবস্থান করে মালিক বিন নুবিয়ার দিকে অগ্রসর হন।খালিদ তোলায়হার মত নুবিয়াকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন  ও পরবর্তীতে নুবিয়াকে হত্যা করা হয়।

এদিকে বনু তামীমের বস্তি গুলো পার হয়ে সাজাহ জানতে পারে, খালিদ বিন ওয়ালিদ  এদিকে আগমন করছেন। আবার মুসায়লামার মত একজন প্রতিদ্বন্দ্বীও তার ভয়ের কারণ ছিল।পরিশেষে সাজাহর  সাথে মুসায়লামার পত্র বিনিময় ঘটে এবং তারা প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। বিয়ের তিন দিন পর বিদায়  নিয়ে সাজাহ নিজ বাহিনীর কাছে ফিরে আসেন। ইত্যবসরে খালিদ বনু তামিমের দিকে অগ্রসর হয়ে আসছিলেন।  সাজাহ বাহিনী খালিদের বাহিনীর সামনে পড়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পলায়ন করেন।  পরবর্তীতে সাজাহ পালিয়ে অজ্ঞাত জীবন যাপন শুরু করেন। 


৩। মুসায়লামাঃ

নবী (সঃ) এর জীবদ্দশা থেকেই মুসায়লামা ইসলাম বর্জন করে প্রকাশ্যে  বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। তিনি ইসলামকে নানাভাবে বিকৃত করতেন। রাসূলের মৃত্যুর পর প্রথমে ইকরামা ও সোহরাবিলকে মুসায়লামার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। কিন্তু  মুসায়লামার কাছে খলিফার বাহিনী পরাজিত হয়। 

এদিকে বনু তামিম থেকে খালিদ বিন ওয়ালিদ মদিনায় ফিরেন। পরবর্তীতে  আবু  বকর (রাঃ) খালিদকে মুসায়লামার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। মুসায়লামার ৪০ হাজার সৈন্যের সাথে খালিদের ১৩ হাজার সৈন্যর ভীষণ ও প্রলয়ংকারী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ ইয়ামার যুদ্ধ নামে পরিচিত। খালিদ প্রথমে মুসায়লামা বাহিনীর  আক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং পরবর্তীতে তীব্র তেজস্বিতায় মুসায়লামার বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। অনেকটাই কাবু হয়ে মুসায়লামা বাহিনী একটি বাগানে আশ্রয় নেয়। এই বাগানেই মুসায়লামাসহ অসংখ্য লোক নিহত হয়। অবশেষে এই ভয়ংকর যুদ্ধে ইসলামের বিজয়ের দ্বার খুলে যায়।

একটি বিষয় স্পষ্ট যে, খালিদ বিন ওয়ালিদ  ছিল রিদ্দা যুদ্ধগুলির  নায়ক। ছয় মাসের মধ্যেই সেনাপতি হিসেবে তার যুদ্ধ কৌশলের কাছে মধ্য আরবের উপজাতিগুলো আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন,  খালিদের তরবারির সহায়তায় আবুবকরের নেতৃত্বে উপদ্বীপটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে। খালিদের যুদ্ধকৌশল আর তেজস্বিতা না থাকলে হয়ত মুসলমানদের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হত। 


রিদ্দার যুদ্ধের ফলাফলঃ

রিদ্দার যুদ্ধ ছিল ইসলামের ধর্মীয়,সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন।রিদ্দার যুদ্ধ জয়লাভের ফলে মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠাসহ গোটা আরব উপদ্বীপের আরব জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন হয়।বিদ্রোহী গোত্রদের যাকাত দিতে বাধ্য করায় রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক সংগঠনের পথ প্রশস্থ হয়।তাছাড়া,এই যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরোক্ষ ফলাফল ছিল, ইসলাম রিদ্দার যুদ্ধে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইহা পরবর্তীতে অর্ধ বিশ্বজয়ের প্রধান সহায়ক ছিল।অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান থাকলে মুসলমানগণ কখনোই প্রভূত্ব বিস্তারে সাফল্য লাভ করতে পারত না।পরবর্তীতে আমরা ক্রমশ ইসলামের সামরিক আভিজাত্য দেখতে পায়।

তবে অধিকাংশ আরব ঐতিহাসিকদের মতে,অধিকাংশ রিদ্দার যুদ্ধ যত না শক্তির সাহায্যে বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছে,যে সমস্ত মানুষ তখন ইসলামধর্ম গ্রহণ করেনি তাদের ইসলামের পক্ষে টেনে আনার জন্যই তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে। 

নবী (সঃ) এর জীবদ্দশায় আরবের অধিকাংশ অঞ্চল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেনি।তারা ছিল প্যাগান,ইহুদি ও খ্রিষ্টান।রিদ্দার যুদ্ধের পর অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে।খ্রিষ্টানদের অধিকাংশ বিতাড়িত হয় এবং বাকি যারা ছিল তাদের প্রাণের বিনিময়ে ধর্মান্তরিত করা হয়।পরবর্তীতে আবু বকরের কঠোর পদক্ষেপে দু বছরের মধ্যে সারা আরব ভূমি মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। 


রাজ্যবিস্তারঃ

আবু বকরের খিলাফতে রিদ্দা যুদ্ধপরবর্তী উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি বা রাজ্যবিস্তার।অন্তবিপ্লব ধ্বংস করে খলিফা আরব-ভূখন্ডের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে কালদিয়া ও সিরিয়া প্রদেশের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।ধর্মের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই দুই প্রদেশের জনসাধারণ ছিল আরবদের স্বগোত্রীয়।কালদিয়া হল পারস্যের সাসানিয়া রাজ্যের অন্তর্গত এবং সিরিয়া ছিল বায়জেনটাইন সাম্রাজ্যের শাসনাধীন।যুদ্ধাভিযানের অন্যতম কারণ ছিল পারস্য ও বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের নৃপতিদ্বয় বিদ্রোহী আরব গোত্রগুলিকে সাহায্য করত।যেমনঃবাহরাইনে বিদ্রোহ দেখা দিলে পারস্য সম্রাট বিদ্রোহীদের সাহায্যের জন্য সৈন্য প্রেরণ করে।ভন্ডনবী তোলায়হা এবং সাজাহ বায়জেনটাইন সাম্রাজ্যের সমর্থনে বিদ্রোহ করে।এইভাবে সীমান্তে সংঘর্ষ হতো।


পারস্য অভিযানঃ

আবু বকর (রাঃ) মুসান্নার নেতৃত্বে একটি বাহিনী পারস্য সীমান্তে প্রেরণ করে উস্কানিমূলক তৎপরতা বন্ধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।পরবর্তীতে খালিদকে আরো সৈন্যসহ মুসান্নার সাহায্যে প্রেরণ করেন।কালদিয়ার পারসিক শাসনকর্তা সীমান্তে মুসলমানদের বাধা দিতে গিয়ে পরাজিত হন।পরবর্তীতে মুসলিম বাহিনী সাফল্যের সাথে হীরা অঞ্চল দখল করে।

প্রায় এই সময় খলিফা সেনাপতি খালিদকে তার অর্ধেক সৈন্যসহ সিরিয়া পাঠাতে বাধ্য হলেন।ফলে,মুসান্না সামান্য সৈন্য দিয়ে একাকী পারসিকদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।


সিরিয়া অভিযানঃ

নবী (সঃ) এর জীবদ্দশা থেকে সিরিয়া অভিযান শুরু হয়।মুতাহ সংঘর্ষের ঘটনাটি নবী (সঃ) এর আমলের  সিরিয়ার বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযান ছিল।

এরপর আবু বকর ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে উসামার নেতৃত্বে সিরিয়া সীমান্তে অভিযান প্রেরণ করেন এবং সাফল্য লাভ করেন।

তিনি আবার  ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে রিদ্দা যুদ্ধগুলির শেষে সৈন্যদলকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে একটি সুপরিকল্পিত উপায়ে আরব অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।আমর,ইয়াজিদ ও সোহরাবিলকে ৩টি দলের সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন।তারা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে বায়জেনটাইনের অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাহিনীকে পরাজিত করে।ইয়াজিদের বাহিনী প্যালেস্টাইনের শাসনকর্তা সারগিয়াসকে পরাজিত করে।সারগিয়াসের পরাজয়ের সংবাদ পেয়ে বায়্জেনটাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস তার ভ্রাতা থিওডোরাসের অধীনে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন।ইতিমধ্যে খালিদ হীরা হতে সিরিয়া পৌছান।মুসলমানদের সম্মিলিত বাহিনী ৪০০০০ সৈন্য নিয়ে হিরাক্লিয়াসের ২৪০০০০ সৈন্যের বিরাট বাহিনীকে পরাজিত করেন।সিরিয়া বিজয়ের সুসংবাদ যখন হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নিকট পৌছায়,তখন তিনি কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত।এই কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়েই খলিফার সংক্ষিপ্ত শাসনের অবসান ঘটে।


Reference:

1.Ameer Ali, Syed. A Short Story of Saracens

 2.Hitti,P.K.Histrory of the Arabs

 3.Watt,W.M.Muhammad;Prophet  and     Statesman

 4.রেজা-ই-করিম,মুহম্মদ,আরব জাতির ইতিহাস

 5.ইসলামের ইতিহাস,ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হাসান

6.Foundations of Islam, Benjamin Walker

 7.Islam: A Short History, Karen Armstrong

 8.মধ্যপ্রাচ্যঃঅতীত ও বর্তমান,ইয়াহিয়া আরমাজানী

 9.Wikipedia