এ বিউটিফুল মাইন্ড; ভালবাসার রহস্যময় সমীকরণ

এ বিউটিফুল মাইন্ড; ভালবাসার রহস্যময় সমীকরণ

এ বিউটিফুল মাইন্ড; ভালবাসার রহস্যময় সমীকরণ

ভালবাসা;পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুততম অনুভুতি।ভালবাসার জন্য মানুষ কি না করতে পারে! সব কিছু যে কল্পনাতেই সম্ভব তা কিন্তু নয়।কিছু কিছু ভালবাসা বাস্তবেই হয়ে থাকে।যেই ভালবাসার রহস্যময় সমীকরণগুলো সহজে সমাধান করা যায় না।এর কোনো যুক্তি নেই,যৌক্তিকতাও নেই।তেমনি এক ভালবাসার গল্প অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী গণিতবিদ জন ন্যাশ এবং তার স্ত্রী এলিসিয়া ন্যাশ এর। ১৯৯৮ সালে তাদের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিলভিয়া নাসার এ বিউটিফুল মাইন্ড নামক একটি বই বের হয়। ২০০১ সালে এই বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয় রন হাওয়ার্ড পরিচালিত এ বিউটিফুল মাইন্ড মুভিটি।

যাইহোক এবার মুভির দিকে আসা যাক-

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতবিদ্যার উপর লেখাপড়া করতেন জন ন্যাশ।জন ন্যাশ তার সবক্ষেত্রেই যুক্তি খুঁজতেন।প্রত্যেকটা কাজে, এমনকি খেতে গেলেও যুক্তি খুঁজতেন।যার কারণে সবাই থাকে পাগল ভাবত।তিনি কারো সাথে মেশা পছন্দ করতেন না।বরং একা একা সবক্ষেত্রেই সমীকরণ করতেন, আবার সমাধানও করতেন।এমনকি ন্যাশের যখন রিসার্চ পেপার জমা দেওয়ার সময় তখন ন্যাশ লাইব্রেরীর কাঁচে জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে ব্যস্ত।এভাবে থাকতে থাকতে বাইরের জগতের সাথে তার সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে।তিনি নিজের ভেতরই আলাদা এক কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করে নেয়।যেখানে তিনি কল্পনার মানুষগুলোর সাথে মিশতে শুরু করেন।

প্রথমেই আসে তার কল্পনার জগতে সাহিত্যের ছাত্র চার্লস হারম্যান।যে ন্যাশকে সবসময় সবদিক থেকেই সাহায্য করে।ন্যাশের বিপদের মুহুর্তে চার্লস পাশে থাকে।

এভাবে চার্লস আর তার বোনের মেয়ে মার্সির সাথে ন্যাশের দিন কাটতে থাকে।কয়েকবছর পর ন্যশের ডাক পড়ল পেন্টাগনে।দেশের শত্রুদের কিছু কোড ব্রেক করতে বলা হয় তাকে।এভাবেই কোড ব্রেক করতে করতে তার সাথে পরিচয় হয় ইউএস ডিফেন্স এজেন্ট উইলিয়াম পার্চারের সাথে।পার্চার তাকে দেশের বিভিন্ন ক্ষতির কথা বলতে থাকে।ন্যাশ এসব শুনে উত্তেজিত হয়, এবং তার কাজ করতে থাকে।সারাক্ষণ সে শুধু কোড খুজতে থাকে।

একদিন ক্লাস করতে গিয়ে ন্যাশের সাথে পরিচয় হয় এলিসিয়ার।ন্যাশের এলিসিয়াকে ভাল লাগতে শুরু করে এবং এলিসিয়ারও ন্যাশকে ভাল লাগতে শুরু করে।দুইজনের এই ভাল লাগা ভালবাসায় রুপ নেয়।কিন্তু ন্যাশের সেই কোড ব্রেকিং চলে যায় নি।সে এলিসিয়ার মাঝেও কোড খুঁজতে শুরু করে।

কিন্তু ভালবাসার কাছে সবকিছুই হার মানে।তাদের দুইজনের ভালবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করে।তারা বিয়ে করে।কিন্তু বিয়ের পর সে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে থাকে।পার্চার তার পিছু ছাড়েনা।এদিকে এলিসিয়া প্রেগনেন্ট হয়ে যায়।কিন্তু ন্যাশের মাথা থেকে কোড ব্রেকিং এর ভুত আরো বাড়তে থাকে।সে যতই এসব বাদ দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতে চায় ততই পার্চার তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।

কিছুদিন পর হাভার্ডে এক কনফারেন্সে যায় ন্যাশ।সেখানে গিয়ে কাহিনী মোড় নেয় অন্যদিকে।অবাক করা এক বিস্ময় জানা যায়।ন্যাশ যাদেরকে দেশের শত্রু ভেবে এতদিন যাদের বিরুদ্ধে কোড ব্রেকিং করা শুরু করেছিল; তারা আসলে মনোচিকিৎসক দল।আসলে ন্যাশ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ন্যাশ নিজের চারপাশে বিভিন্ন অস্তিত্ব তৈরি করে, কাল্পনিক অস্তিত্ব।যাদের কোন ভিত্তিই নেই।আসলে চার্লস হারম্যান, মার্সি, পার্চার নামে কোনো ব্যক্তিই নেই; সব তার নিজের কল্পনা।তারা ন্যাশের মনে এত বেশি ঢুকে গিয়েছিল যে ন্যাশ বাস্তবতা থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

ধীরে ধীরে ডাক্তারের কারণে ন্যাশ সুস্থ হতে থাকে।এখানেও ঘটে বিপত্তি।স্ত্রীর সাথে লাগানো শারীরিক সম্পর্ক ভাল রাখার জন্য ঔষধও গোপনে ফেলে দিত সে।যার ফলে তার সিজোফ্রেনিয়া আবার বাড়তে থাকে সবার অজান্তে।

একদিন বাথটাবে বাচ্চাকে গোসল করাতে গিয়ে মাথায় আবার কোড ব্রেকিং এর চিন্তা এসে যায়।সাথে সাথে সে ছুটতে থাকে।সবখানে সে শুধু শত্রু আর কোড দেখতে পায়।এদিকে এলিসিয়া এসে দেখে, বাচ্চা ডুবে যাচ্ছে।তার আর বুঝতে বাকি রইল না ন্যাশের কান্ড।

এলিসিয়া আর পারে না।সে তার বাচ্চার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে মায়ের বাসায় চলে যায়।

একসময় ন্যাশ বুঝতে পারে এ সব কিছুই তার ভ্রম ছিল।সে এলিসিয়াকে ফিরিয়ে আনতে যায়।এলিসিয়াও বুঝতে পারে,একমাত্র ভালবাসায় ন্যাশকে সুস্থ করে তুলতে পারে।চেষ্টা ও পরিশ্রমের কারণে ন্যাশ সুস্থ হতে থাক্বে।এমনকি কদিন বাদে খবর আসে তিনি নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনিত হয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

 

পরিশেষে, ভালবাসা জিনিসটা আসলেই অদ্ভুত।ভালবাসার শক্তির দ্বারা সব সম্ভব।মানুষ ভালবাসার মাধ্যমে সব করতে পারে।ন্যাশের এক বক্তৃতায় এলিসিয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলা হলো-

আজকের এই অবস্থানে আসতে গিয়ে আমার অনেককিছু পার করতে হয়েছে।এবং আমি আমার কর্ম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করেছি।এবং সেটা হলো ভালবাসার এক রহস্যময় সমীকরণ পৃথিবীতে আছে।একমাত্র যেটাকেই যৌক্তিক এবং অর্থপূর্ণ বলা যায়।আমি আজ রাতে এই খানে আসতে পেরেছি শুধু তোমার জন্য।

তুমিই আমার সকল যুক্তি!


Read More: 

চারুলতা;সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি

উদারিং হাইটস 2011;মনস্তাত্বিক দ্বান্ধিকতার অভূতপুর্ব আখ্যান

মেঘে ঢাকা তারা; এক বিদ্রোহী সত্ত্বা

ডিপারচারস-জীবন ও মৃত্যুর অপার্থিব সম্পর্ক

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url