কোন মোবাইল(স্মার্টফোন)সবচেয়ে ভালো
একুশ শতকের অন্যতম প্রয়োজনীয় ও আলোচিত বিষয় হল মোবাইল বা স্মার্টফোন।বর্তমানে মোবাইল বা স্মার্টফোনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক কোম্পানি।সাধারণত একটি কোম্পানির লক্ষ্য থাকে লাভ বা পুঁজি। কোম্পানি গুলো আপনার লাভ নিয়ে চিন্তা করে না,উল্টো নানারকম ব্যবসায়িক কৌশল খাটিয়ে আপনাকেই বোকা বানিয়ে ছাড়ে।
তাই, মোবাইল (স্মার্টফোন) কেনার আগে করণীয় হলঃ কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেওয়ার মাধ্যমে এইসব কোম্পানির ব্যবসায়িক কৌশল থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করা।পুরোপুরি নিস্তার পাওয়া হয়ত সম্ভব নয়, তাও অন্তত চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই।
স্মার্টফোন কেনার আগে প্রথম করণীয় হল নিজেকে প্রশ্ন করে নিবেন,কেন আমি স্মার্টফোন কিনছি।
অনেকেই
গেইমকে প্রাধান্য দিয়ে স্মার্টফোন কিনেন।গেইম যারা প্রাধান্য দিবেন তাদের মোবাইল(স্মার্টফোন ) কেনার আগে ৪টি বিষয়ের উপর নজর দিলে ভাল -
- প্রসেসর
- স্টোরেজ
- র্যাম
- ডিসপ্লে
শুধু ফটোগ্রাফিই মোবাইল কেনার প্রধান উদ্দেশ্য হয় তাহলে তাদের মোবাইল কেনার আগে করণীয় হল ক্যামেরা,স্টোরেজ সহ সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন সেকশনে বিশেষ নজর দেওয়া।
অনেকে শুধু ব্যাটারি ব্যাকআপকেই বেশি গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে মোবাইল কেনার আগে করণীয় হল প্রসেসর,ব্যাটারি ও সফটওয়্যার
অপ্টিমাইজেশন
সেকশনে গুরুত্ব দেওয়া।
প্রত্যেকের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী মোবাইলের প্রত্যেকটি সেকশন আলোচনাসহ নিচে মোবাইল কেনার আগে করণীয়সমূহ তুলে ধরা হলঃ
মোবাইলের কোন প্রসেসর সবচেয়ে ভালো?
প্রসেসরের কোরসংখ্যা যত বেশি হয়, স্মার্টফোন তত দ্রুত কাজ করে।
উল্লেখ্য যে,ডুয়াল(dual) কোর মানে দুইটা কোর, কোয়াড(quad) কোর মানে ৪ টি কোর এবং অক্টা (octa) কোর মানে ৮ টি কোর।
গেইমিং স্মার্টফোনে ক্লকস্পীড এর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উত্তম।ক্লকস্পীড যত বেশি হবে গেইমিং পারফরম্যান্স তত ভাল হবে।ক্লকস্পীডকে গিগাহার্জ এককে প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ 1.80 GHZ, 2.00 GHZ
৩।ন্যানোমিটার প্রযুক্তি(Nanometer):
মোবাইলের জন্য ভালো প্রসেসর বাছাই করার ক্ষেত্রে ন্যানোমিটার প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সাধারণত
প্রসেসরে ন্যানোমিটার প্রযুক্তি যত কম হবে স্মার্টফোন তত দ্রুত হয়,পাশাপাশি ব্যাটারী ব্যাকআপও তত ভাল হয়।
ন্যানোমিটার দিয়ে প্রসেসর এর ভেতরে থাকা ট্রানজিস্টর এর দূরত্ব বোঝায়।এক ট্রানজিস্টর থেকে অন্য একটি ট্রানজিস্টর এর দূরত্ব যত কম,এদের ভিতর ডাটা ট্রান্সফার রেট তত দ্রুতও হবে এবং শক্তিও কম খরচ হবে।উদাহরণঃ11nm, 14 nm, 7 nm, 12 nm, 5nm etc.১১ ন্যনোমিটার প্রযুক্তির একটি প্রসেসরের চেয়ে ৭ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির প্রসেসর দ্রুত হবে ও কম ব্যাটারি খরচ করবে।
এভাবে কোরসংখ্যা, ক্লকস্পীড ও ন্যানোমিটার প্রযুক্তি বিবেচনার মাধ্যমে আমরা মোবাইলের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রসেসর বেছে নিতে পারি।
মোবাইলের কোন র্যাম সবচেয়ে ভালো?
মোবাইলের জন্য সবচেয়ে ভালো র্যাম হিসেবে আমরা মনে করি র্যামের সংখ্যা। অর্থাৎ র্যাম যত বেশি হবে মোবাইলের পারফরম্যান্স তত বেশি হবে;এইসব ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়।র্যামের সংখ্যার চেয়ে র্যামের ধরণ দেখা উচিত।র্যামের ধরণ বা টাইপের একটি তুলনামূলক চার্ট নিচে তুলে ধরা হল-
র্যামের ধরণ |
স্পীড |
ভোল্টেজ |
LP- DDR5 |
6400 MBPS |
0.5v |
LP- DDR4X |
4267 MBPS |
0.6V |
LP- DDR4 |
3200 MBPS |
1.1V |
LP- DDR3 |
1866 MBPS |
1.2V |
|
|
|
- যদি একটি স্মার্টফোনের র্যাম ৮ জিবি আর র্যামের ধরণ LP- DDR4 হয় তাহলে স্পীড হবে (3200×8) = 25600 MBPS।আর অন্য একটি স্মার্টফোনের র্যাম ৪ জিবি আর র্যামের ধরণ যদি LP-DDR5 হয় তাহলে স্পীড হবে (6400×4) =25600 MBPS।র্যামের ধরণের কারণে ৮ জিবি র্যাম আর ৪ জিবি র্যামের স্পীড সমান হয়ে গেল।
- এছাড়া LP-DDR4 ধরণের র্যাম এর চেয়ে LP-DDR 5 কম শক্তি খরচ করে,ফলে ব্যাটারী ব্যাকআপও বাড়ে।
- র্যামের ধরণ যত লেটেস্ট হয় ব্যাটারি ব্যাকআপ,পারফরম্যান্স ও মাল্টিটাস্কিং তত ভাল হয়।
মোবাইলে স্টোরেজ কতটুকু নিবেন?
প্রসেসরের বাছাইয়ের পর মোবাইল কেনার আগে দ্বিতীয় করণীয় হল স্টোরেজ দেখে কিনা। এখন প্রশ্ন হল,মোবাইলের স্টোরেজ কতটুকু নিবেন। স্টোরেজের ক্ষেত্রেও আমরা র্যামের মত ভূল করে বসি।মনে করি,স্মার্টফোনে যত বেশি স্টোরেজ ,ততই ভাল। এইসব ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। স্টোরেজের পরিমাণ দেখার চেয়ে স্টোরেজের টাইপ বা ধরণ দেখা উত্তম। নিচে স্টোরেজের টাইপের একটি চার্ট তুলে ধরা হলঃ
Storage
Type |
Read
speed |
Write
Speed |
UFS
3.1 |
2100 MBPS |
1200 MBPS |
UFS 3.0
|
1260 MBPS |
840 MBPS |
UFS 2.1 |
860 MBPS |
255 MBPS |
EMMC 5.1 |
350 MBPS |
150 MBPS |
|
|
|
EMMC টাইপের স্টোরেজ অনেক পুরাতন।EMMC ধরণের স্টোরেজ টাইপের ক্যামেরা পারফরম্যান্স, গেইম পারফরম্যান্স, ব্যাটারি ব্যাকআপও UFS টাইপের স্টোরেজের তুলনায় অনেক খারাপ।তাছাড়া UFS টাইপের স্টোরেজে Deep sleep,Write
Booster,Throttling Notification টাইপের অনেক ফিচার সাপোর্ট করে।ফলে, UFS টাইপের স্টোরেজ স্মার্টফোনে একটি ভাল পারফরম্যান্স দেয়।
- ক্যামেরা পারফরম্যান্স।
- গেইম পারফরম্যান্স।
তাছাড়া লেটেস্ট স্টোরেজ টাইপ ব্যাটারি ব্যাকআপেও প্রভাব রাখে।যত বেশি লেটেস্ট স্টোরেজ টাইপের স্মার্টফোন কেনা যায়,স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স ততই ভাল হয়।
অবশেষে, মোবাইলের স্টোরেজের পরিমাণ দেখার পাশাপাশি স্টোরেজ টাইপও দেখে নেওয়া প্রয়োজন। তবে মোবাইলে স্টোরেজ কতটুকু নিবেন, সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তরে বলব; স্টোরেজের পরিমাণ আপনার চাহিদামত নিবেন।
মোবাইলের কোন ডিসপ্লে ভালো?
ডিসপ্লে যাচাই করে দেখাও মোবাইল কেনার আগে অন্যতম করণীয়। মোবাইলের জন্য ভাল ডিসপ্লে বাছাইয়ের আগে ৪টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইসব হলঃ ডিসপ্লে নিটস, টাচ স্যাম্পলিং রেট , ডিসপ্লে টাইপ ও ডিসপ্লে রেজুলেশন। এই চারটি বিষয় বিবেচনা করে আমরা মোবাইলের জন্য ভাল ডিসপ্লে বাছাই করতে পারি।মোবাইলে কোন ক্যামেরা সবচেয়ে ভাল?
মেগাপিক্সেল বেশি হলে ভাল,তবে মেগাপিক্সেল বেশি হওয়া মানেই ভাল ক্যামেরা বা ভাল ছবি নয়। মেগাপিক্সেলের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে।যেমন- বিলবোর্ড হিসেবে ব্যবহার,বড় পোস্টার এর জন্য ছবি তোলার ক্ষেত্রে।আসলে মেগাপিক্সেল দিয়ে ছবি কতো বড় বা কতো বড় প্রিন্ট করা যাবে সেটা নির্ধারিত হয়।তাই বেশি মেগাপিক্সেল দেখিয়ে স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানীগুলো আমাদের বোকা বানায়।মোবাইলের জন্য সবচেয়ে ভাল ক্যামেরা বাছাই করতে তিনটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এই তিনটি বিষয় নিচে তুলে ধরা হলঃ
- ক্যামেরা হার্ডওয়্যার যেমন- লেন্স,ইমেজ সেন্সর ভাল মানের দেওয়া।সনি এবং স্যামসাং এর কিছু ইমেজ সেন্সর খুবই ভাল।এছাড়া ক্যামেরার অ্যাপারচার,ফোকাল লেন্থও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ক্যামেরার অ্যাপারচার যত কম হবে কম আলোতে ছবি তত ভাল উঠবে।
- লেটেস্ট স্টোরেজ টাইপের ব্যবহার:- লেটেস্ট স্টোরেজ টাইপ ব্যবহার করলে ইমেজ প্রসেসিং খুবই ভাল হয়।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়,ছবি তোলার সময় খুবই সুন্দর দেখায়,কিন্ত ছবি তোলার পর আগের মত সুন্দর দেখায় না।EMMC টাইপের বা পুরনো টাইপের স্টোরেজ ব্যবহার করলে এমন সমস্যা দেখায়।
- সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন:-ছবিতে ডিটেইল,ডায়নামিক রেঞ্জ,ডেপথ,ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন ইত্যাদির জন্য ভাল ইমেজ প্রসেসিং বা সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন প্রয়োজন।
মোবাইলে কোন ব্যাটারী সবচেয়ে ভাল?
ব্যাটারি ব্যাকআপ পুরোটাই ব্যাটারীর সাইজের উপর নির্ভর করে না।অনেক সময় দেখা যায়, স্মার্টফোনের ব্যাটারীর সাইজ 5000 MAH হওয়া সত্ত্বেও 4000 MAH ব্যটারীর স্মার্টফোনের আগেই ব্যাটারি ব্যাকআপ শেষ হয়ে যায়।এমন সমস্যা সচরাচর দেখা যায়। মোবাইলের জন্য সবচেয়ে ভাল ব্যাটারি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হলঃ
- ব্যাটারীর সাইজঃ সাধারণত ব্যাটারীর সাইজ বা ক্ষমতা (MAH) যত বেশি ততই ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশি হয়।
- প্রসেসরঃ প্রসেসর এর ন্যানোমিটার প্রযুক্তি যত কম,ব্যাটারী ব্যাকআপ তত বেশ।
- সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনও খুব গুরুত্ব পূর্ণ ব্যাটারী ব্যাকআপের ক্ষেত্রে।
- AMOLED টাইপের
ডিসপ্লেও ব্যাটারী সেইভ করে।
- লেটেস্ট প্রযুক্তির র্যাম আর স্টোরেজ এর ব্যবহারও ব্যাটারির ব্যাকআপের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলে।
মোবাইলে সফটওয়্যার আপডেট কি গুরুত্বপূর্ণ?
মোবাইলেসফটওয়্যার আপডেট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।কোন নির্মাতা
প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে সফটওয়্যার আপডেট দেয়,সেদিকে নজর দেওয়া উত্তম।সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে মোবাইলের অনেক ইন্টারনাল বাগ
সমাধান হয়ে যায়,নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়।
নতুন মোবাইলের বিক্রয় পরবর্তী সেবা দেখে কিনা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
নতুন মোবাইলের বিক্রয় পরবর্তী সেবা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।স্মার্টফোন কিনে ফেলাই বড় কথা না।স্মার্ট ফোন কেনার পরও
অনেক সমস্যা থাকে। তাই কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নতুন স্মার্টফোন কেনার পর বিক্রয় পরবর্তী
সেবা ভাল কিনা ,সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
যদি আসলেই বোকা হতে না চান, উপরের সব করণীয় মেনে চলুন মোবাইল কেনার আগে
বি.দ্র. যারা শুধু ২০২২ সালে মোবাইল ফোন নিতে চান,তাদের জন্য নিচের লিংকে একটি গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে।